Need help? Call Us: +88096 13 100 600

কর্মমূখী ও ব্যস্ত জীবনে আমাদের রীতিমতো জীবনযাত্রার পরিবর্তন, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, দ্রুত খাবার খাওয়া ও অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তবে প্রকৃতির কাছে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন রোগের সমাধান। বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা জানবো ওমেগা-৩ কি, এর গুরুত্ব, ওমেগা-৩ কোন কোন খাবারে পাওয়া যায় এবং ওমেগা-৩ এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
বাংলাদেশের অন্যতম অর্গানিক ফুড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শশী অর্গানিক লি. বিভিন্ন রকম ন্যাচারাল ফুড উৎপাদন করে আসছেন যেমনঃ ওমেগা-3 ডিম, লীক সবজি, খাটি সরিষার তেল, ঢেঁকি ছাটা লাল চাল ইত্যাদি। তাদের Online Grocery Store থেকে যেকোন সময় অর্ডার করার সুযোগ রয়েছে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কী?
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হলো এক ধরনের পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তবে আমাদের শরীর নিজে থেকে এই ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে পারে না, তাই এটি খাদ্য থেকে গ্রহণ করতে হয়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে, তারমধ্যে রয়েছে:
- ALA (Alpha-Linolenic Acid) – উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া যায়, যেমন- চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট।
- EPA (Eicosapentaenoic Acid) – এটি মূলত সামুদ্রিক মাছ থেকে পাওয়া যায়।
- DHA (Docosahexaenoic Acid) – এটি আমাদের মস্তিষ্ক ও চোখের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা মাছ ও সাপ্লিমেন্টে পাওয়া যায় ।
কেন ওমেগা-৩ গুরুত্বপূর্ণ?
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, যা আমরা বিভিন্ন খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি। এটি আমাদের হার্টের সুস্থতা, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা, চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা এবং প্রদাহ কমানোসহ বিভিন্নভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে। নিচে এর কিছু গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো-
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ওমেগা-৩ রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে এবং হৃদস্পন্দনের অনিয়ম কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়: ওমেগা-৩ আমাদের মস্তিষ্কের কোষের গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও মানসিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং ওমেগা-৩ নিয়মিত গ্রহণ করলে ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে: ডিপ্রেশন ও উদ্বেগজনিত সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য ওমেগা-৩ অত্যন্ত উপকারী।
- চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: ওমেগা-৩ চোখের রেটিনার জন্য খুবই উপকারী। কারণ এটি চোখের শুষ্কতা ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
- হাড়ের জন্য উপকারী: ওমেগা-৩ হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
- প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে: ওমেগা-৩ একটি প্রাকৃতিক প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান। এটি শরীরের দীর্ঘস্থায়ী ইনফ্লেমেশন কমিয়ে বিভিন্ন রোগ যেমন- হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: এটি রক্তনালী প্রশস্ত রাখতে সাহায্য করে, ফলে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং তা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার সমুহ
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি পুষ্টি উপাদান, যা হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড মূলত কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকেই পাওয়া যায়। তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক খাবার:
- স্যামন (Salmon)
- সারডিন (Sardines)
- ম্যাকারেল (Mackerel)
- টুনা (Tuna)
- হেরিং (Herring)
- অ্যাংচোভি (Anchovies)
- কড লিভার অয়েল (Cod Liver Oil)
উদ্ভিজ্জ উৎস:
- ফ্লাক্সসিড (Flaxseeds)
- চিয়া সিড (Chia seeds)
- আখরোট (Walnuts)
- হেম্প সিড (Hemp seeds)
- সয়া প্রোডাক্টস
তেল:
- সরিষা তেল
- ক্যানোলা তেল
- জলপাই তেল
- তিলের তেল
প্রাণিজ উৎস:
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম
- ঘাস-খাওয়া গরুর মাংস
ওমেগা-৩ এর ঘাটতি হলে যেসব সমস্যা হতে পারে
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর ও মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শরীরে এর ঘাটতি হলে একাধিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওমেগা-৩-এর অভাবজনিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
-
- স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ হ্রাস: ওমেগা-৩ এর ঘাটতি হলে মনোযোগের ঘাটতি, ভুলে যাওয়া ও শেখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। বয়স্কদের মধ্যে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- বিষণ্ণতা (Depression): ওমেগা-৩-এর ঘাটতি হতাশা, উদ্বেগ এবং মুড সুইং-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
- চোখের সমস্যা ও দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া: চোখের রেটিনায় DHA এর ঘাটতি হলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। শুষ্ক চোখ, চোখ জ্বালা ও ফোকাসিং সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- হাড় ও সন্ধির ব্যথা: ওমেগা-৩ প্রদাহ হ্রাস করে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ঘাটতি হলে সন্ধির ব্যথা, ফোলা বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা বেড়ে যায়।
-
- হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি: কোলেস্টেরল ব্যালেন্স বিঘ্নিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
- চর্ম সমস্যা: ত্বক, চুলকানি, ফেটে যাওয়া ঠোঁট ইত্যাদি দেখা দিতে পারে এবং কি একজিমা বা স্কিন ইনফ্লেমেশন বেড়ে যেতে পারে।
- শিশুদের বিকাশে ব্যাঘাত: গর্ভাবস্থায় ওমেগা-৩-এর অভাব শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে প্রভাব ফেলে। শিশুর বুদ্ধি, দৃষ্টি ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ঘুমের সমস্যা: ঘুম না আসা বা বারবার জেগে ওঠার সমস্যা দেখা দেয়। শরীর ক্লান্ত ও অস্থির লাগে।
- দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও রোগপ্রবণতা বৃদ্ধি: ওমেগা-৩-এর ঘাটতি শরীরে প্রদাহজনিত অবস্থা বাড়ায়।এতে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এবং অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ওমেগা-৩ খাবার খেলে যারা বিশেষভাবে উপকৃত হবেন
- হৃদরোগে আক্রান্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি
- মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন
- গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা
- চোখ ও মস্তিষ্কের সমস্যা আছে এমন ব্যক্তি
- শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে
ওমেগা-৩ খাওয়ার কিছু সতর্কতা
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্যকর হলেও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলা দরকার। তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- সঠিক মাত্রা বজায় রাখা: অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে রক্ত তরল হয়ে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে।
- কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের ক্ষেত্রে সতর্কতা: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ (ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন বা এন্টিকোয়াগুল্যান্ট) যা রক্ত পাতলা করে দিতে পারে। তাই ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য: গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সামুদ্রিক মাছে কিছু দূষিত পদার্থ থাকতে পারে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর পারে।
- পেটের সমস্যা বা গ্যাস: ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টে অনেক সময় বদহজম, ঢেঁকুর, গ্যাস বা মাছের গন্ধ উঠে আসা দেখা যায়।
যাদের অ্যালার্জি আছে – তাদের জন্য পরামর্শ
- সামুদ্রিক মাছ বা শেলফিশ অ্যালার্জি: যাদের সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে স্যামন, ম্যাকারেল, সার্ডিন বা শেলফিশ-এ অ্যালার্জি আছে, তাদের এসব সাপ্লিমেন্ট খেলে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ফোলা, শ্বাসকষ্ট বা এনাফাইল্যাক্সিস এর ঝুঁকি থাকে।
- পরামর্শ: আপনি যদি মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণীর প্রতি সংবেদনশীল হোন, তাহলে ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট বেছে নিন এটি ১০০% উদ্ভিজ্জ এবং নিরাপদ।
ওমেগা-৩ এর সঙ্গে ওষুধের মিথষ্ক্রিয়া:
-
- রক্ত পাতলা হয়ে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- ওমেগা-৩ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তাই ওষুধের সঙ্গে রক্তচাপ খুব নিচে নেমে যেতে পারে।
- একসাথে খেলে পেটের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে।
- ওমেগা-৩ ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে পারে, তাই ব্লাড সুগার হঠাৎ কমে যেতে পারে
পরিশেষ
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর ও মনের জন্য এক অনন্য উপাদান। হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা, চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং প্রদাহ কমানো পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে এটি উপকার করে। সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।
আপনি যদি এখনো ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু না করে থাকেন, তাই আজ থেকেই আপনার খাদ্যতালিকায় এই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানটিকে যোগ করার বিষয়ে সচেতন হন। সুস্থ থাকুন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন।
বাংলাদেশের সবথেকে বড় ও অথেনটিক অর্গানিক খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শশী অর্গানিক ফুড লি. সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের শতভাগ অর্গানিক উপায়ে ঢেঁকি ছাঁটা চাল (Dheki Chata Chal) উৎপাদন করে আসছে। শশী অর্গানিক এর অনলাইন গ্রোসারি শপে (Organic grocery store In Online) এ খুব সহজেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল অর্ডার করা যায়।