Need help? Call Us: +88096 13 100 600
কাঁচা কলা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। আমরা সাধারণত কাঁচা কলা তরকারি বা ভর্তা হিসেবে খেয়ে থাকি। শুধু পাকা কলা নয়, কাঁচা কলারও রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুনাগুণ, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আমাদের মধ্যে অনেকেই কাঁচা কলাকে গুরুত্ব দেই না, কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন যে কাঁচা কলা খেলে আমাদের শরীরের ওপর কতগুলো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কলার একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। আর তা হল ফল হিসেবে যেমন এর কদর আছে, তেমনি সবজি হিসেবেও এর কদর কিন্তু কম নয়। মূলত পাকা কলা খাওয়া হয় ফল হিসেবে। কাঁচা কলা সবজি হিসেবেই পরিচিত। এই প্রবন্ধে আমরা কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুনাগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কাদের জন্য এটি বেশি উপকারি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
কাঁচা কলা হলো একটি উচ্চ পুষ্টিমানের সবজি যা ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। কাঁচা কলায় যা পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। কাঁচা কলায় কি কি ভিটামিন আছে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য উপাদান। ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলাতেও প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, কাঁচাকলা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস হয়। এছাড়া কাঁচা কলায় থাকে এনজাইম, যা ডায়েরিয়া এবং পেটের নানা সংক্রমণ দূর করে। তাই ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। সবুজ কলা ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস, যা হজমশক্তি উন্নত করে, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কাঁচা কলায় ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে এবং স্বাভাবিক স্নায়ু ফাংশন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলার খোসার উপকারিতাও অনেক বেশি। কলার খোসা সাধারণত আমরা ফেলে দেই, কিন্তু এর মধ্যে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচা কলার খোসা ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা যায়, যেমন ব্রণ, ডার্ক সার্কেল ইত্যাদি কমাতে এটি কার্যকর।
কাঁচা কলার ঔষধি গুনাগুণ
কাঁচা কলা শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, ঔষধি গুনাগুণেও সমৃদ্ধ। কাঁচা কলার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক ফাইটোকেমিক্যাল যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়ক। যেমন, এটি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়া, কাঁচা কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে কাঁচা কলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। কারণ কাঁচা কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীরের ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত হয়। এছাড়া, কাঁচা কলায় থাকা পটাসিয়াম হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতে সহায়তা করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কাঁচা কলার স্বাস্থ্য উপকারিতা
কাঁচা কলার স্বাস্থ্য উপকারিতা অসংখ্য। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নানা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণঃ কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেকেই জানতে চান কাঁচা কলা খেলে কি ওজন বাড়ে? উত্তর হলো, নিয়মিতভাবে এবং সঠিক পরিমাণে কাঁচা কলা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, বরং বাড়ে না।
২. হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ কাঁচা কলা খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। এতে থাকা প্রোবায়োটিক ফাইবার অন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। যারা হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা কাঁচা কলা খেলে উপকার পেতে পারেন।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ কাঁচা কলায় পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কাঁচা কলা একটি আদর্শ খাদ্য।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ কাঁচা কলার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক স্টার্চ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৫. ত্বকের যত্নঃ কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা যায় অনেক কিছু। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। ত্বকে ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে কলার খোসা প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কাঁচা কলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, কাঁচা কলার প্রিবায়োটিক ফাইবার অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সহায়ক, যা সামগ্রিক ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
৭. পেটের প্রদাহ কমায়ঃ কাঁচা কলা পেটের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা ফাইবার এবং পটাসিয়াম হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, অন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কাঁচা কলার প্রাকৃতিক স্টার্চ হজমশক্তি উন্নত করে এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, ফলে পেটের প্রদাহ হ্রাস পায়। এছাড়া কাঁচা কলা ডায়রিয়া নিরাময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. শারীরিক শক্তির মাত্রা বাড়ায়ঃ কাঁচা কলা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট ও পটাশিয়াম, যা শরীরকে তৎক্ষণাত্ এনার্জি সরবরাহ করে। পটাশিয়াম পেশীর কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি কমাতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, কাঁচা কলার ফাইবার হজমে সহায়ক হয়ে শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করে, যা দৈনন্দিন কাজের জন্য উপকারী।
৯. গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের উন্নতিতেঃ কাঁচা কলা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, পটাশিয়াম, এবং ভিটামিন বি৬, যা অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। এটি বমি ভাব ও গ্যাস প্রতিরোধে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা একটি সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য।
১০. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিঃ কাঁচা কলা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, যা অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন B6 ও C হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে হাড় মজবুত হয় এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
কাঁচা কলা কাদের জন্য বেশি উপকারি
কাঁচা কলা প্রায় সবার জন্যই উপকারী, তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি গোষ্ঠীর জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। যেমন:
ডায়াবেটিস রোগীরা: কাঁচা কলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে প্রাকৃতিক শর্করা কম থাকে এবং এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় আক্রান্তরা: যারা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা কাঁচা কলা খেলে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন, কারণ এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
রক্তচাপের রোগীরা: কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ভালো রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান যাঁরা: কাঁচা কলায় ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ত্বকের সমস্যা যারা ভুগছেন: কাঁচা কলার খোসার উপকারিতা ত্বকের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি ত্বকের ব্রণ, ডার্ক সার্কেল এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
অর্গানিক কাঁচা কলা কি?
অর্গানিক বলতে প্রাকৃতিক উপায়ে কোন কিছু উৎপাদন করাকে বোঝায়। এই পদ্ধতিতে কোন প্রকার ক্ষতিকর সার বা রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয় না। আর এই পদ্ধতিতে যখন কাঁচা কলা উৎপাদন করা হয় তাকে অর্গানিক কাঁচা কলা বলে। সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে উৎপাদন হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা বজায় থাকে।
অর্গানিক পণ্য কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের অন্যতম অর্গানিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শশী অর্গানিক ফুড লি. দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বস্ততার সাথে Organic Food উৎপাদন করে আসছে। তাদের Online grocery shop থেকে খুব সহজেই যেকোনো পণ্য অর্ডার করা যায়। বর্তমানে শশী অর্গানিক ফুড লি. শীর্ষস্থানে রয়েছে। #No1 online grocery shop in Bangladesh.
পরিশেষে
কাঁচা কলা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি মূল্যবান সংযোজন হতে পারে। এর পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুনাগুণ অসাধারণ। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নানা স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাঁচা কলার ভর্তা বা তরকারি হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি এর খোসাও বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ত্বকের জন্য উপকারী। অতএব, কাঁচা কলাকে আমাদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং এর থেকে উপকার গ্রহণ করা উচিত।