Need help? Call Us: +88096 13 100 600
ফল আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবলমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়, বরং এর মাধ্যমে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও মেলে। বিশেষ করে, বারোমাসি ফলগুলির গুরুত্ব অনেক বেশি। বারোমাসি ফলগুলি সারা বছর পাওয়া যায় এবং এগুলি আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির অভাব পূরণ করে। এই প্রবন্ধে আমরা সারা বছর পাওয়া যায় এমন ১০টি ফলের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
বারোমাসি ফল বলতে কি বোঝায়
বারোমাসি ফল বলতে সেই সব ফলকে বোঝানো হয় যা সারা বছর বিভিন্ন মৌসুমে পাওয়া যায়। এই ফলগুলো সাধারণত বিভিন্ন আবহাওয়া ও পরিবেশে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় এবং তাদের পুষ্টিগুণের জন্য অত্যন্ত পরিচিত। এছাড়াও, বারোমাসি ফলগুলি অর্গানিক ফল হিসেবেও পরিচিত, কারণ এগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশে চাষ করা হয় এবং এতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কম হয়।
সারা বছর পাওয়া যায় এমন ১০টি ফল
বার মাসি ফল হলো এমন ফল যা বছরব্যাপী পাওয়া যায় এবং সাধারণত বিভিন্ন মৌসুমে ফলন দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেকযোগ্য ১০টি ফল হলঃ
১. কলা
২. পেঁপে
৩. নারিকেল
৪. লেবু
৫. আপেল
৬. কমলা
৭. ড্রাগন ফল
৮. আঙুর
৯. আনারস
১০. ডালিম/ আনার
বারোমাসি ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. কলা
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
কলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অসাধারণ। এটি পটাসিয়াম, ভিটামিন বি6, এবং ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কলা শক্তি জোগাতে সহায়ক এবং দ্রুত শক্তির উৎস হিসেবে পরিচিত। এটি হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এছাড়াও, কলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, কারণ এতে ট্রিপ্টোফান রয়েছে, যা ডোপামিনের উৎপাদনে সহায়তা করে। নিয়মিত কলা খাওয়া শরীরের সুষম পুষ্টি বজায় রাখতে সহায়ক। সব মিলিয়ে, কলা একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
২. পেঁপে
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর ফল, যা শরীরের জন্য নানা উপকারিতা প্রদান করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, এবং ই পাওয়া যায়, যা ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। পেঁপেতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এছাড়াও পেঁপে হৃদরোগ প্রতিরোধ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এই ফলটি নিয়মিত খেলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেঁপে সুস্বাদু ও সহজলভ্য একটি ফল।
৩. নারিকেল
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
নারিকেল এক বিশেষ ধরনের ফল, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। নারিকেলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রোলাইট ও ভিটামিন রয়েছে, যা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সহায়ক। নারিকেলের শাঁস থেকে প্রাপ্ত ফ্যাট ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও, নারিকেল প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ, যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। নারিকেলের তেল ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হয় এবং চুলের জন্যও খুব উপকারী। এই ফলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. লেবু
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
লেবু একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, যা প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এবং শরীরের ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। লেবুর রস হজমে সহায়ক এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, লেবু রক্তের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। লেবুতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। প্রতিদিন লেবু পানি পান করলে শরীর ডিটক্সিফাই হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।
৫. আপেল
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
আপেল একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ফল, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপেলের আঁশ হজমে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আপেলে ক্যালোরির পরিমাণ কম, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত আপেল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ত্বক ও চুল ভালো থাকে। প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়ার মাধ্যমে শরীর ভালো রাখতে সহায়ক।
৬. কমলা
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
কমলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ। এতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এছাড়াও, কমলাতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং হজম শক্তি উন্নত করে। কমলার ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সুগঠিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কমলার পটাশিয়াম হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত কমলা খেলে ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং দেহের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখা যায়।
৭. ড্রাগন ফল
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
ড্রাগন ফল একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা আমাদের শরীরের জন্য নানা ধরনের উপকারিতা নিয়ে আসে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ড্রাগন ফল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৮. আঙুর
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
আঙুর একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আঙুর হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এছাড়াও, এটি ত্বকের যত্নে সহায়ক এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমাতে ভূমিকা রাখে। আঙুর ফাইবারের ভালো উৎস হওয়ায় হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এছাড়া, এটি কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক। আঙুরের নিয়মিত সেবন শরীরকে সতেজ ও শক্তিশালী রাখে।
৯. আনারস
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল যা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন সি থাকে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামক এনজাইম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আনারসের ফাইবার উপাদান হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও আনারস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত আনারস খেলে শরীরের পানি শূন্যতা কমে এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
১০. ডালিম/ আনার
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
ফল হিসেবে ডালিম বা আনার অত্যন্ত পুষ্টিকর ও উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফাইবার এবং ফোলেট রয়েছে। ডালিম রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ডালিমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যজনিত প্রক্রিয়া ধীর করে। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধেও ডালিম কার্যকর। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডালিম উপকারী কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পরিশেষে
বারোমাসি ফলগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতার কারণে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ফল খাওয়ার উপকারিতা অসীম, এবং এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই সারা বছর পাওয়া যায় এমন এই ফলগুলি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে একটি পদক্ষেপ নিন।
শশী অর্গানিক ফুড লি. বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্গানিক ফুড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের অনলাইন গ্রোসারী শপ থেকে খুব সহজেই অর্গানিক ফুড অর্ডার করা যায়।