সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতিদিনের হাঁটার গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। আমাদের ব্যস্ত জীবনে যেখানে অধিকাংশ সময় বসে কাটে, সেখানে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস হতে পারে সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি। হাঁটাহাটি স্বাস্থ্যের জন্য এমন একটি অভ্যাস যা সহজেই গড়ে তোলা যায়, আবার এটি অনেক রোগ থেকে রক্ষা করতেও সহায়ক। সঠিক নিয়ম মেনে যদি আমরা প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলি, তবে এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিসীম ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রতিদিন হাঁটা যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা সবাই জানি। কিন্তু কখন ও কিভাবে হাঁটা উচিত, তা জানেন না অনেকেই। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। এই প্রবন্ধে আমরা সুস্থ থাকতে প্রতিদিন কত সময় হাটা উচিত, এর নিয়ম এবং নিয়মিত হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।  

প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা

হাঁটার অনেক উপকারিতা আছে, যা শরীর ও মন উভয়ের জন্যই উপকারী। হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো একটি ব্যায়াম, কারণ এটি প্রায় সব বয়সের মানুষের জন্য সহজ ও সুবিধাজনক। এর মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অংশের গঠন শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আসুন জেনে নেই কেন প্রতিদিনের হাঁটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

 

 

 

 

 

১. হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা

হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন হাঁটা এক গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। নিয়মিত হাঁটা হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালনকে উন্নত করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। হাঁটার ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি শুধু হৃদযন্ত্রের সুরক্ষাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে আমরা সহজেই হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

২. ওজন কমাতে সহায়ক

ওজন কমাতে প্রতিদিন হাঁটা একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। এটি শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায় এবং মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। নিয়মিত হাঁটা শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং পেশিকে শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও, হাঁটার সময় মন শান্ত হয়, মানসিক চাপ কমে এবং শরীরকে সক্রিয় রাখে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। 

৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

প্রতিদিন হাঁটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। নিয়মিত হাঁটা শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে ক্যালোরি বার্ন হয়, যা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, নিয়মিত হাঁটা রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে, ফলে আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।

৪. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে

প্রতিদিন হাঁটা শুধু শরীরের জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। হাঁটার সময় আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখে। নিয়মিত হাঁটা অবসাদ ও উদ্বেগ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এছাড়া এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।

৫. হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধি

প্রতিদিন হাঁটা হাড় ও পেশির শক্তি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। নিয়মিত হাঁটার ফলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং এটি অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। হাঁটার মাধ্যমে পেশির সঞ্চালন ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটা পেশিগুলোর স্থায়িত্ব ও নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়, যা দৈনন্দিন কাজগুলো সহজে করতে সহায়তা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক শক্তি গড়ে তোলে।

৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে 

প্রতিদিন হাঁটার উপকারিতা অসংখ্য। এর মধ্যে অন্যতম হলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে রক্তচাপ কমানো সম্ভব। হাঁটা শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ধমনীতে চাপ কমিয়ে দেয়। এছাড়া, হাঁটা শরীরে স্ট্রেস হরমোন কমিয়ে দেয়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

৭. পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

প্রতিদিন হাঁটা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি পাচনতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। হাঁটার মাধ্যমে অন্ত্রের মাংসপেশি সচল থাকে, যা খাদ্য পদার্থকে সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করে। নিয়মিত হাঁটার ফলে মেটাবলিজমও উন্নত হয়, যা অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়াতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর পাচন ব্যবস্থার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৮. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি

প্রতিদিন হাঁটা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটা আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা চিন্তার ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। হাঁটার ফলে উদ্বেগ ও হতাশা কমে যায় এবং মনোযোগ বাড়ে। নিয়মিত হাঁটা করলে সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা উন্নত হয়। এছাড়াও, এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং আলঝেইমারসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি কমায়।

কখন হাঁটা উচিত?

কখন হাঁটা উচিত তা জানতে হলে ব্যক্তিগত দৈনন্দিন রুটিন, জলবায়ু ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। বেশিরভাগ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন সকালে হাঁটা শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। সকালবেলা শরীর চাঙ্গা থাকে এবং বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণও বেশি থাকে, যা হাঁটার জন্য উপযুক্ত সময়। অন্যদিকে, বিকালে হাঁটাও বেশ উপকারী, কারণ এটি দিনের চাপ দূর করে মানসিক শান্তি নিয়ে আসে।

অনেকেই ভাবেন, কেবল সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু সকালে হাঁটার পাশাপাশি বিকালেও হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। দেখা গেছে, সকালে হাঁটাহাটি করলে সারা দিনের জন্য শরীর ও মনের প্রস্তুতি নেয়া যায়। অন্যদিকে বিকালে হাঁটলে সারাদিনের স্ট্রেস দূর হয় এবং রাতের ঘুম ভালো হয়।

১. সকালে হাঁটার নিয়ম: সকালে হাঁটতে গেলে খালি পেটে না হাঁটতে পারলে ভালো হয়। সকালের হালকা নাস্তার পর আধা ঘণ্টা হাঁটতে পারেন। সকালবেলার শীতল বাতাস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শরীরকে প্রশান্তি এনে দেয় এবং মনকে সতেজ রাখে।

২. বিকালে হাঁটার উপকারিতা: বিকালে হাঁটাহাটি করলে কাজের চাপ থেকে মুক্তি মেলে। বিকালে শরীরের শক্তি বেশি থাকে, তাই শরীর সহজেই হাঁটাহাটির সাথে খাপ খায়। এছাড়াও, বিকালের হালকা সূর্যের আলোতে হাঁটা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণে সহায়ক।

প্রতিদিন কত সময় হাঁটা উচিত

প্রতিদিন কত কিলোমিটার হাঁটা উচিত এবং কত সময় হাঁটা উচিত এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট সুপারিশ দিয়ে থাকেন।

১. প্রাথমিক ধাপ হিসেবে

যারা নতুনভাবে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে চান, তাঁদের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট হাঁটা যথেষ্ট। এতে করে শরীর ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং হাঁটায় আনন্দও পাওয়া যাবে।

২. ধীরে ধীরে সময় বৃদ্ধি

প্রাথমিক অবস্থায় ১৫-২০ মিনিট হাঁটার পর ধীরে ধীরে সময় ও দূরত্ব বাড়ানো উচিত। সাধারণত প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটাহাটি করলে শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

৩. সপ্তাহে ৫ দিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা

বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন হাঁটার পরামর্শ দেন। এতে করে নিয়মিত শরীরচর্চার একটি ধারা তৈরি হয় এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসও গড়ে ওঠে।

সুস্থ থাকতে হাঁটার পাশাপাশি অর্গানিক খাবারের ভূমিকা

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন হাঁটার পাশাপাশি স্বাস্থকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরী। প্রতিদিনের খাবারের উপর আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা ও সুস্থতা বজায় থাকে। আর এই খাবার হিসেবে অর্গানিক ফুড এর বিকল্প নেই। অর্গানিক খাবার কোন প্রকার ঔষধ ও রাসায়নিক ছাড়া উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যার জন্য এর সকল প্রকার স্বাস্থকর গুণাগুন থাকে অটুট। প্রতিদিন হাঁটার পাশাপাশি অর্গানিক খাবার আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে।

বাংলাদেশের অন্যতম অর্গানিক ফুড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শশী অর্গানিক ফুড লি. বিশ্বস্ততা ও সফলতার সাথে অর্গানিক প্রোডাক্ট সরবরাহ করে আসছে দেশ ও বিদেশে। তাদের দেশ সেরা Organic grocery shop থেকে খুব সহজেই বিভিন্ন অর্গানিক ও গ্রোসারী প্রোডাক্ট অর্ডার করা যায়।

পরিশেষে

হাঁটাহাটি শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়। নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রা আরও স্বাস্থ্যকর করা সম্ভব। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় হাঁটাহাটি করার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে পারি। নিয়মিত হাঁটা আমাদের সকলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হিসেবে গড়ে উঠুক এটাই আমাদের কাম্য। 

 

Posted in
#Health Tips

Post a comment

Your email address will not be published.

Select the fields to be shown. Others will be hidden. Drag and drop to rearrange the order.
  • Image
  • SKU
  • Rating
  • Price
  • Stock
  • Availability
  • Add to cart
  • Description
  • Content
  • Weight
  • Dimensions
  • Additional information
Click outside to hide the comparison bar
Compare