Need help? Call Us: +88096 13 100 600
সুস্থ জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই পুষ্টিকর খাদ্যের মধ্যে কাঁচা ছোলা একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটি শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নয়, বরং নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতাও প্রদান করে। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হলো ছোলা। এতে রয়েছে ভিটামিন, ফাইবার ও প্রোটিন। ছোলা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন হিসেবে পরিচিত।
চলুন, আজ আমরা কাঁচা ছোলার পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানি এবং কীভাবে এবং কত পরিমাণে এটি খাওয়া উচিত তা জানার চেষ্টা করি।
কাঁচা ছোলার পুষ্টি উপাদান ও পুষ্টিগুন
কাঁচা ছোলা, বা ভেজানো ছোলা, এক প্রকারের প্রোটিনসমৃদ্ধ শস্য যা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমাহার। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১, বি২, বি৬ আছে। এছাড়াও ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম,ফসফরাস, কপার ও আয়রন রয়েছে। নিম্নে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হলো
প্রোটিন: কাঁচা ছোলায় প্রোটিনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি, যা শরীরের পেশী গঠন ও মেরামতের জন্য সহায়ক। এটি স্বাস্থ্যকর স্নেহজাতীয় পদার্থ এবং খনিজের ভালো উৎস, যা শক্তি বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ফাইবার: কাঁচা ছোলা প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ ফাইবারের উৎস, যা পাচন প্রক্রিয়া উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এতে থাকা ফাইবার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
ভিটামিন এবং খনিজ: কাঁচা ছোলা ভিটামিন এবং খনিজের একটি অসাধারণ উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B6, ফোলেট, এবং ভিটামিন C রয়েছে, যা শরীরের শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কাঁচা ছোলায় জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, এবং আয়রনের মতো খনিজ রয়েছে, যা সঠিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ও হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়া আপনার পুষ্টির চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কাঁচা ছোলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলকে ধ্বংস করে। এতে ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর ত্বক বজায় রাখতে সহায়ক।
কাঁচা ছোলার উপকারিতা
প্রতিদিন কাঁচা ছোলা খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
কাঁচা ছোলা ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, “কাঁচা ছোলা খেলে কি ওজন বাড়ে?” উত্তর হলো, কাঁচা ছোলা উচ্চ ফাইবারের কারণে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার ও প্রোটিন যা ক্ষুধা কমাতে সহায়তা করে এবং দীর্ঘসময় পেট ভরিয়ে রাখে। ক্যালোরি কম থাকায় এটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এছাড়া, কাঁচা ছোলা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো
কাঁচা ছোলা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকরী। এতে থাকা ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে হার্টের জন্য উপকারী একটি খাবার।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
কাঁচা ছোলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঁচা ছোলায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে এটি ধীরে ধীরে শর্করা নিঃসরণ করে, যা রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
- পাচন প্রক্রিয়া উন্নতি
কাঁচা ছোলা পাচন প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার, যা অন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া, ছোলায় থাকা প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ হজমে সহায়তা করে, ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে। প্রতিদিন কাঁচা ছোলা খেলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- শক্তি বৃদ্ধি
কাঁচা ছোলা শক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং আঁশের পাশাপাশি আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে, যা শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্লান্তি কমায়। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া এটি হজম শক্তি উন্নত করে এবং পেশি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য
কাঁচা ছোলা ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং ই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বলিরেখা কমাতে সহায়ক। ছোলার জিঙ্ক ও ভিটামিন বি চুলের গোড়া মজবুত করে, খুশকি দূর করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে, ফলে চুল হয়ে ওঠে সুস্থ ও ঝলমলে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে
কাঁচা ছোলা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফোলেট থাকে, যা রক্তে লোহিত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, ছোলায় প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে, যা শরীরের শক্তি বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা হয় এবং রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
- ত্বকের বুড়িয়া যাওয়া প্রতিরোধে
কাঁচা ছোলা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই ত্বকের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, কাঁচা ছোলা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং বলিরেখা ও বুড়িয়া যাওয়ার লক্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল থাকে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
কাঁচা ছোলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি চমৎকার পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিনের সমাহার রয়েছে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কাঁচা ছোলা খেলে মুড স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে এবং ডিপ্রেশন মোকাবেলায় কার্যকর। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাঁচা ছোলার খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন কত গ্রাম কাঁচা ছোলা খাওয়া উচিত? একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ২০-৩০ গ্রাম কাঁচা ছোলা খাওয়া যথেষ্ট। কাঁচা ছোলা খাওয়ার কিছু নিয়মাবলি নিম্নরূপ:
ছোলা ভেজানোর নিয়ম: কাঁচা ছোলা খাওয়ার আগে তা ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে পুষ্টি উপাদান বাড়বে এবং সহজে হজম হবে।
সকালে খাওয়া: সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। এটি দিনের শুরুতে শক্তি যোগায়।
স্যালাডে ব্যবহার: কাঁচা ছোলাকে সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে অন্যান্য পুষ্টিগুণও পাওয়া যায়।
ডাল বা তরকারিতে মিশিয়ে: আপনি কাঁচা ছোলাকে সেদ্ধ করে ডাল বা তরকারির সঙ্গে খেতে পারেন। এতে এটি আরও সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হয়ে ওঠে।
মসলা দিয়ে রান্না: কাঁচা ছোলাকে মসলা দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়, যা স্বাদ এবং পুষ্টি উভয়ই বৃদ্ধি করে।
পরিশেষে
সুস্থ জীবনযাপন ও পুষ্টিকর খাদ্যের অন্যতম উপাদান কাঁচা ছোলা। এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে এটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে, এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম ও পরিমাণের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কাঁচা ছোলার সাথে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপাদান যুক্ত করলে এর পুষ্টিমান বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের জন্য কাঁচা ছোলা একটি আদর্শ খাদ্য।
অর্গানিক ফুড বর্তমানে অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর একমাত্র কারন হচ্ছে এর উৎপাদন পদ্ধতি। অর্গানিক পণ্য উৎপাদন এর ক্ষেত্রে কোন প্রকার রাসায়নিক ও ঔষধের ব্যবহার করা হয় না। একদম প্রাকৃতিক উপায়ে এসকন পণ্য উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের অবস্থিত শশী অর্গানিক ফুড লি. দীর্ঘদিন ধরে এই অর্গানিক ফুড উৎপাদন করে আসছে। তাদের Online Grocery Shop থেকে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে এই সকল Organic Product অর্ডার করা যায়।