মানসিক চাপ (Stress) আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সাধারণ অংশ। কাজের চাপ, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা এসব কিছুর মধ্যে আমরা অনেক সময় এমন একটি অবস্থা অনুভব করি, যেখানে আমাদের মানসিক অবস্থাকে সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই নিবন্ধে আমরা মানসিক চাপের কারণ, লক্ষণ এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।   

মানসিক চাপ কি?

মানসিক চাপ হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে আমরা মানসিকভাবে উত্তেজিত, উদ্বিগ্ন বা অস্থির বোধ করি। এটি সাধারণত তখন ঘটে যখন আমরা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, যা আমাদের পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে ওঠে। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথের অংশ হিসেবে আমাদের অনেক কিছুর মুখোমুখিই হতে হয়।

তার মধ্যে অন্যতম একটি বলা চলে মানসিক চাপ। এটি যেন আমাদের রোজকার জীবনেরই একটি অংশ। মানসিক চাপের কারণে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সময় থাকতেই দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ কিভাবে কমানো যায় তা খেয়াল রাখতে হবে। 

অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণ 

অতিরিক্ত মানসিক চাপের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে। প্রতিদিণের বিভিন্ন ছোট-বড় সমস্যা, যেমন কাজের চাপ, ব্যক্তিগত সমস্যা, আর্থিক সংকট, স্বাস্থ্যগত সমস্যা ইত্যাদি থেকে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। মানসিক চাপ কমাতে হলে শুরুতে চাপ হওয়ার কারণগুলো জানতে হবে। এরপর সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধান করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক চাপ একা একা সমাধান করার চেষ্টা করবেন না। চাপ নিয়ন্ত্রণে বন্ধু,পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাহায্য নিন। মানসিক চাপের কিছু সাধারণ কারণ নিম্নরূপ:

  • কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং সময়সীমা 
  • অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা
  • সম্পর্কের জটিলতা
  • সামাজিক প্রত্যাশা
  • পারিবারিক দায়িত্ব
  • স্বাস্থ্যগত সমস্যা
  • ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা
  • জীবনধারার পরিবর্তন 
  • অপর্যাপ্ত বিশ্রাম
  • অপরিকল্পিত ঘটনায় রিস্থিতির অবনতি

এই কারণগুলো আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য সহায়ক কৌশল প্রয়োজন।

মানসিক চাপের লক্ষণ

মানসিক চাপের ফলে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপের লক্ষণ বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। চাপের কারণে বিভিন্ন শরীরিক সমস্যা হতে পারে। মানসিক চাপ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে এটি আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:

  • উদ্বেগ এবং অস্থিরতা
  • ঘুমের সমস্যা
  • মাথাব্যথা 
  • বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা
  • মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস
  • ডিপ্রেশন এবং হতাশা
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা
  • খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম
  • ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া বা সহজেই বিরক্ত হওয়া

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১৫ টি উপায়

এখন আমরা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে আপনার দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

(১) নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম  

নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করা আপনার শরীরের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও কার্যকর। ব্যায়াম মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির মধ্যে একটি। এছাড়া যোগব্যায়াম ও ধ্যানের মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ককে শিথিল করা যায়। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ধরণের হরমোনের মধ্যে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত করে। এটি আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং আমাদের মানসিক সাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। 

(২) পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম 

অনিয়ম করে ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবেও মানসিক চাপ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের অভাবে শরীরে ক্লান্তি ভর করতে পারে আর তার থেকে আসতে পারে বিষণ্ণতা। পর্যাপ্ত ঘুম শরীর এবং মনের ক্লান্তি দূর করে, শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করে। ঘুমের অভাব মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত এবং আরামদায়ক ঘুম আপনাকে চিন্তা মুক্ত রাখবে এবং শরীর ও মনকে পুনরুজ্জীবিত করবে। 

(৩) উপযুক্ত খাদ্যতালিকা গ্রহন 

মানসিক চাপ কমাতে হলে শুরুর দিকেই একটি উপযুক্ত খাদ্যতালিকা তৈরি করুন। খাবারের অনিয়মের কারণেও অনেক সময় মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই সবার আগে খাদ্যতালিকা ঠিক করতে হবে। নিয়মিত, পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য খেতে হবে। ফল, শাক-সবজি, প্রোটিন বেশি করে খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তেলে ভাজা, ঝাল, শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার, সিগারেট, কফি, এলকোহল ইত্যাদি যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে। মানসিক চাপে থাকলে খাওয়ার প্রতি অনেকেরই অনীহা হতে পারে। মনে রাখবেন, না খেয়ে থাকা চাপকে বা সমস্যাগুলোকে কমিয়ে দেবে না বরং খাবার আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখবে এবং চাপ দূর করার পদক্ষেপগুলো নিতে সাহায্য করবে।

শশী অর্গানিক ফুড লি. দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সহ বহির্বিশ্বে অর্গানিক ফুড সাপ্লাই করে আসছে। অর্গানিক বাজারে খাবারের স্বাস্থ্যকর গুণগত মান বজায় রাখায় তাদের ব্যপক সুনাম রয়েছে। তাদের Organic online grocery shop থেকে খুব সহজেই অর্গানিক পণ্য অর্ডার করা যায়।

(৪) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম 

গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে আরাম দেয়। প্রতিদিন কয়েক মিনিট এই ব্যায়াম করলে আপনি অনেক কঠিন রোগ থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। এছাড়া এটি আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখবে এবং শরীরকে আরো কর্মক্ষম করে তুলবে। সাইকোফিজিওলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে এবং প্রশান্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গভীর শ্বাস নেয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে পারেন। এটি দ্রুত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

(৫) সর্বদা শিথিল থাকার অভ্যেস করা 

মানসিক চাপের সময় দেহ ও মনকে শিথিল রাখা জরুরি। মানসিক চাপের কারণ অনেক ক্ষেত্রেই সহজেই চলে যায় না। এটা দূর হতে সময় লাগবে। তাই এসময় নিজেকে শান্ত রাখা জরুরি। মনকে শিথিল রাখতে হালকা গান শুনতে পারেন। আর শরীরকে শিথিল রাখতে স্নান করতে পারেন। পার্লারে বা স্যালুনে গিয়ে মানসিক চাপ কমাতে পারে এ রকম ম্যাসেজ করা। নেতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। পজিটিভ চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খারাপ চিন্তা হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করুন ইতিবাচক চিন্তা করতে। নিজেকে আত্মবিশ্বাসী এবং ইতিবাচক রাখার জন্য দেহ ও মনকে সর্বদা শিথিল রাখা জরুরি।  

(৬) পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো 

প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো আপনার মানসিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করতে পারে। এটি আপনাকে মানসিক শান্তি এনে দেয় এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়। সঠিক সামাজিক বৃত্তের সাথে থাকা মানসিক চাপ পরিচালনার একটি বড় পদক্ষেপ। ভাল সঙ্গের সাথে আমরা আমাদের নেতিবাচক অনুভূতিগুলিকেও ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা রাখি এবং এটি স্ট্রেস ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। তাই নিয়মিত পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবের সাথে সময় কাটানো জরুরী। এটি আপনার মানসিক  সাস্থ্যের উন্নতিতে আপনাকে সহায়তা করে।  

(৭) নতুন শখ গড়ে তোলা 

নতুন শখ বা আগ্রহের মধ্যে মনোনিবেশ করলে আপনি আপনার মানসিক চাপকে ভুলে যেতে পারেন। নতুন কিছু শেখার অভিজ্ঞতা আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করবে। সব সময় চাইলেও খারাপ চিন্তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আর ঠিক সে সময়টাই বেছে নিতে হবে আপনার পছন্দের কাজগুলো করে ফেলার জন্য। হতে পারে ছোট বেলায় আপনি গান শিখতেন, আর পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর বিভিন্ন কাজের চাপে নিজেকে সেভাবে সময় দেওয়া বা পছন্দের কাজগুলো করা হয় না। তাই আবার নতুন করে গান শেখা বা গান গাওয়া, ঘর গুছানো, বাগান করা ইত্যাদি পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন। এতে মাথা থেকে চিন্তা দূর হয়, মন ভালো থাকে। 

(৮) বই পড়া

একটা ভালো বই পারে আমাদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে ভিন্ন এক জগতে নিয়ে যেতে। কেননা বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের মনের সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ ঘটে, ভাবনার নতুন পথ উন্মোচিত হয়। আর আপনার সামনে যখন নতুন এক দুনিয়া খুলে যাবে, তখন দুশ্চিন্তা স্থায়ী হওয়ার খুব বেশি সুযোগ পাবে না। নিরব মনোবিকাশ ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বই পড়ার ভূমিকা অপরিসীম। বই পড়া মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা চাপের সাথে লড়াইয়ে সহায়ক। একজন পাঠক বইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনকে দেখার সুযোগ পান এবং মানসিক চাপ কমানোর জন্য এটি একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

(৯) সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকা 

অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা আপনার মানসিক শান্তির জন্য ভালো। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নেওয়া মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। প্রতিদিন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরণের তথ্য, সংবাদ, এবং ব্যক্তিগত জীবনের আপডেট দেখি, যা অনেক সময় আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে। এই প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে সাময়িক বিরতি নিলে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়া যায় এবং চিন্তা-ভাবনার জন্য সময় পাওয়া যায়। এটি মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং নিজেকে নতুন উদ্যমে কাজে মনোযোগী হতে সুযোগ দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং আত্ম-সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারি।

(১০) সময় ব্যবস্থাপনা শেখা 

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। সময়কে সঠিকভাবে ভাগ করে নিলে কাজের চাপ কমে এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় থাকে। প্রথমে, আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো তালিকাভুক্ত করুন এবং সেগুলোকে প্রাধান্য দিন। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করুন। বিরতিহীন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন। পাশাপাশি, অবসর সময়কেও সঠিকভাবে কাজে লাগান, যেন আপনি মানসিকভাবে নিজেকে রিচার্জ করতে পারেন। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি চাপমুক্ত থাকতে পারবেন এবং আপানার জীবনের মান উন্নত হবে। 

(১১) সৃজনশীল কাজের মনোভাব তৈরি করা  

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায় হলো সৃজনশীল কাজ করা। সৃজনশীল কাজ যেমন চিত্রাঙ্কন, গান শোনা, লেখালেখি, বাগান করা বা হাতের কাজ মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। এটি আমাদের মনকে স্বাভাবিক জীবনের চাপ থেকে দূরে রাখে এবং মনকে ইতিবাচক করে তোলে। সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত রাখলে মনকে শান্ত করা এবং মানসিক শক্তি বাড়ানো সম্ভব। চাপ কমানোর পাশাপাশি, সৃজনশীল কার্যকলাপ আমাদের আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত সৃজনশীল কাজের মধ্যে নিজেকে নিয়োজিত করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। 

(১২) বিশেষজ্ঞের সহায়তা ও পরামর্শ নেওয়া 

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞের সহায়তা  ও  পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চাপ অনুভব করা স্বাভাবিক, তবে দীর্ঘমেয়াদী চাপের ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা চাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল ও থেরাপি প্রদান করেন, যেমন কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি, মেডিটেশন, এবং রিলাক্সেশন টেকনিক। তারা আপনাকে চাপের কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করবেন এবং সঠিকভাবে মোকাবিলা করার উপায় শেখাবেন। তাই, আপনি   মানসিক চাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন , তাহলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনার সুস্থ জীবনযাত্রার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।  

(১৩) মানসিক অবস্থার প্রতি সচেতন থাকা 

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো আপনার মানসিক অবস্থার প্রতি সচেতন থাকা। যখন আমরা চাপ অনুভব করি, তখন আমাদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হতে পারে, এবং এটি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই, নিজের অনুভূতি, চিন্তা, এবং মানসিক চাপের স্তরের প্রতি নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। দৈনন্দিন জীবনে ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম এই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। যখনই আপনি চাপ অনুভব করেন, নিজেকে একটু সময় দিন, শান্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং আপনার অনুভূতির প্রতি সচেতন থাকুন। এটি আপনাকে আরও ভালোভাবে চাপ মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

(১৪) নিজের জন্য সময় বের করা 

নিরবতার মাঝে নিজের জন্য সময় বের করা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। প্রতিদিন কিছু সময় নিজেকে দিন,  এটা হতে পারে বই পড়া, গান শোনা, অথবা নীরবতার মধ্যে সময় কাটানো। এই সময়ে আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনাকে শান্ত করতে পারবেন, যা মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক। নিজের জন্য কিছু সময় বের করে নিয়মিত বিশ্রাম নিন। এটি আপনাকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং আপনার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। মানসিক সুস্থতার জন্য এই ছোট্ট সময়ের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। তাই, আপনার দিনের ছোটখাটো মুহূর্তগুলিকে নিজের জন্য বরাদ্দ করুন যা আপানারে মানসিক স্বস্তি লাভে আপনাকে সহায়তা করবে। 

(১৫) ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা

আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন স্রষ্টার প্রতি প্রার্থনা আমাদের মনকে শীতল করে, মনে এক অনাবিল প্রশান্তি তৈরি করে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা একটি প্রাচীন ও কার্যকর পদ্ধতি। ধর্মীয় প্র্যাকটিস যেমন প্রার্থনা, ধ্যান, এবং ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে। এসব ধর্মীয় কার্যক্রম আমাদের মনের শান্তি ফিরিয়ে আনে এবং আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা পানন করে। ধর্মীয় কাজের মাধ্যমে আমরা আত্ম-পরিচয় এবং শান্তির সন্ধান পাই, যা দৈনন্দিন জীবনের চাপ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। তাই ধর্মীয় কাজে নিয়মিত মনোনিবেশ করলে মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু ও সুখী জীবন অর্জন করা সম্ভব। 

পরিশেষ

মানসিক চাপ আমাদের জীবনের একটি অনিবার্য অংশ, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।  একটা কথা মনে রাখবেন, খারাপ সময় সবার জীবনে থাকে। সেই খারাপ সময়কে সঙ্গে নিয়েই আমাদের হাসতে জানতে হয়, আনন্দ করতে হয়, জীবনের অজানা পথটুকু চলতে হয়। তাই যে কোনো উপায়েই নিজেকে ভালো রাখতে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে।

সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। উপরে আলোচনা করা ১৫টি উপায় আপনাকে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হলো নিজেকে সময় দেয়া, নিজের প্রতি যত্নশীল থাকা এবং সঠিক পদ্ধতিতে মানসিক অবস্থাকে মোকাবিলা করা। শান্ত এবং চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি। 

দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে শশী অর্গানিক ফুড ও গ্রোসারি অর্ডার করুন যেকোনো সময়। যেকোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন

Order your organic grocery online!

Posted in
#Health Tips

Post a comment

Your email address will not be published.

Select the fields to be shown. Others will be hidden. Drag and drop to rearrange the order.
  • Image
  • SKU
  • Rating
  • Price
  • Stock
  • Availability
  • Add to cart
  • Description
  • Content
  • Weight
  • Dimensions
  • Additional information
Click outside to hide the comparison bar
Compare